এসে
পড়ল ‘বাক ৭৩’ । এবারে কবিতার সংখ্যা একটু বেশি রাখা হল । পরপর দুটি পোস্টে কম
কবিতা প্রকাশিত হওয়ার ফলে কয়েকজনকে কবিতার মনোনয়ন-সংবাদ পাওয়ার পরেও কয়েক মাস
অপেক্ষা করতে হয়েছে ।
এবারের
পোস্টে সামগ্রিক বাংলা কবিতার চেহারা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি , এই দাবি বাড়াবাড়ি হয়ে
যাবে । কিন্তু একটা আদল হয়ত ফুটে উঠল । শ্যামলকান্তি দাশের পাশাপাশি ঋষি সৌরক কী
লিখছেন , মন্দাক্রান্তা সেনের পাশেই দেবযানী বসু কী লিখছেন , কোথায় আছে এই
মুহূর্তে ধীমান চক্রবর্তী বা স্বপন রায়ের কলম ... এই কৌতুহল তো আমাদের মিটল এবারের
পোস্টে ।
'এই মাসের কবি' হলেন প্রবীর রায় ।
অনুবাদ
বিভাগদুটি থেকে চোখ সরাবেন না । বারীন ঘোষালের অনুবাদে সমকালীন ৩ জন মার্কিন কবি
উঠে এসেছেন । পাবেন ‘কবিতা ভাষান’ বিভাগে । ‘অন্য ভাষার কবিতা’ বিভাগে অর্জুন
বন্দ্যোপাধ্যায় তুলে এনেছেন সমকালীন জাপানি কবি মারি কাশিওয়াগির অনুপম কিছু অনু
কবিতা ।
রমিত
দে এবার এক অসম্ভব কাজ করেছে । তার হারানো কবিতার জানালায় তুলে এনেছে বিহারীলাল
চক্রবর্তীর ‘সারদামঙ্গল’ । সম্পূর্ণ কাব্যগ্রন্থটি ওই বিভাগে পাবেন ।
‘কবিতা
বিষয়ক গদ্য’ লিখলেন উমাপদ কর ।
‘গল্পনা’
লিখলেন সুপ্রভাত রায় ।
‘দৃশ্যত’
বিভাগে একঝাঁক ছবি । এই বিভাগ নিয়ে আমরা একটু অন্যভাবে ভাবছি । হয়ত আগামী পোস্টে
সেটা আপনাদের সামনে মেলে ধরতে পারবো ।
ইন্দ্রনীল
ঘোষ এবং নীলাব্জ চক্রবর্তী তাঁদের ধারাবাহিক উপন্যাসের নতুন পর্বে কী করলেন , দেখা
যাক ।
তার
আগে , চলুন , কবিতাগুলো পড়া যাক ।
দেবযানী বসুর কবিতা
ঘুমতা নাঘুম
শীতের ফুল আঁকছে বিয়েবাড়ি
কোথাও চালু আছে ঘুমতা নাঘুম
...
বাইকগুলো বালিতে পা ঘসে
আমার কাজ শুধু শিউলি ফোঁটা গামলায়
ধরে রাখা
কলাবতীর স্নানে সাবানের কল্পযুগ
...
আজো হৃতিক রোশন আসেনি
জলতরঙ্গ পোষা মাছের লেজে
লেজের দোষে কী কী খসতে পারে ...
সানাইয়ের উভচর ডাক ... মেসেজ এল
আজ আর শিসপাগলা ঠুকঠুকুয়াটি
আসবে না
লাল মেঝে ফোকাস ফেলছে
...
বাসা না বাঁধা ময়ূরের কয়েকটি আল্পনা
তার জানা
হয়ত উপবাসী টাওয়ার জোছনা বমি করবে
রাতে
এয়োস্ত্রীদের আমি গোড়ালি ঘোরাতে
বলেছি বালিতে
লম্বা সাদা রিবনের আশায়
একটি কিশোর পাখি
উড়ে যাচ্ছে টাওয়ারের দিকে
অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
হাওয়ার গাড়ি
আমাদের এঁকে
রাখা সহ্য-এ এখনো বসে আছে মানুষ ।
তার কিছুটা
অন্যরকম এই বাগানের জন্য । কোন ঘটনার জন্য ।
কোমর থেকে
সরে গেছে স্থাপন । ঘরে রেখে পিড়ি আর সামান্য জল ।
যে আয়নার
চোখে আমি এই নিয়ে তীর । চলে আসা মাঠের
কাছে বারিদের প্রথম শব্দ ।
তোমার চাবি
হয়ে সেইসব শীত এই এলো বলে । আসছে মুড়ে রাখা প্রান্ত দুপু্র কোনো
বোতামের
সেরে ওঠা বয়েস ।
যদি আলো
দিয়ে মোহ করা যেত অভিমান । আর ক্ষেতের থালার পাশে কী কী সব ফলক ভাবনা ।
কারা যায়
তখন মেহেন্দি শুনতে ।
আমি তো আমিই
খুঁজছি আজ গাছের পাঁচিলে । নিষেধ না রেখে ।
শুধু অরণ্য হতে চাই ।
চাই পৌষের ঝুলে থাকা প্রার্থনাবাড়ি ।
তোমাকে
সাজিয়ে রাখা আশ্রমে ছুটির কুয়াশা আর জমে ওঠা প্রস্তাবগুলি ।
শ্যামলকান্তি দাশের কবিতা
দখল
বাড়িউলিকে দস্তানা ভেবেছি
আর তার মধ্যে নিরাপদে ঢুকে পড়েছি ।
শীতের রাত্রে মাঝে মাঝে সেঁক নিচ্ছ ।
শুকিয়ে যাচ্ছে গায়ের ব্যথা ।
আমার ভেতরে সেই ভাড়াটে-ভাবটা
এখন আর একদম নেই ।
বলতে ভাল লাগছে , পুরো বাড়িটা এখন আমার ।
বিজলি বাতি
সেবারের মতো ঝড় হল না ।
শিহরন হল না ।
শুধু কাঁটাগাছে
অনেক অনেক বিদ্যুৎ ঝুলে রইল ।
এবার আমাদের সবক’টা ভেতরে
তীব্র আলো জ্বলবে ।
বিজলি বাতির খবর লোকে যে সহজে ভুলে
যায় না , এ তো জানা কথা ।
ভাদ্রমাস
ডাঙায় কুকুর । আকাশে ঘুড়ি ।
এটা ভাদ্রমাস ।
দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে
অপলকে রঙের ঘূর্ণি দেখছে ।
আমি কুকুরের মতো মিলন সহ্য করেছি ।
উড়ান সহ্য করেছি ঘুড়ির মতো ।
তাই আমার পেট প্রতি মাসে
একটু একটু উঁচু হচ্ছে ।
এই ভাদ্রমাসেই একটা স্বাধীন , সার্বভৌম রাক্ষস
আমার জালে ধরা পড়েছে ।
বিষয় : কুকুর
তুমি আমাকে মারলে ধরলে ঢোকালে খিমচোলে
কিন্তু আগের মতো রক্ষা করলে না ।
আমার মনে ঘৃণা জন্মালো , বিকার জন্মালো , ভয়ংকর ভয়ংকর
বমি জন্মালো , লম্বা লম্বা নগ্নতা জন্মালো ।
আমি হতে পারতাম লাল নীল হলদে সবুজ , ওরাং ওটাং
কিংবা বিহঙ্গ , বোম্বেটে কিংবা শয়তানের অনুচর
হলাম না যে , তার তো একটাই কারন ।
আমার সামনে পেছনে কোনো দৈর্ঘ্য নেই
উচ্চতা নেই
রামগিরি কিংবা অলকা নেই
কাল নিরবধি । চিরকালের মতো আমি হয়ে গেলাম
দেশকাল অতিক্রমকারী একটা আমুদে কুকুর ,
মঞ্চসফল এবং সদাহাস্যময় ঘেউঘেউ !
পাশবালিশ
সাতদিন ধরে ব্যবহার করছি এই পাশবালিশ ।
হাত নড়ছে পা নড়ছে
এমনকি তীব্রভাবে নড়ে উঠছে আমার মধ্যভাগ ।
এই লম্বমান পাশবালিশের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছি
তোমার আকুল ধ্বনি , আমার প্রবল সার্থকতা ।
পাশবালিশের নাম যদি হয় জাদু
তাহলে নিশ্চয়ই আমার নাম বাস্তবতা ।
মন্দাক্রান্তা সেনের কবিতা
পার্সোনাল
১
আমি
তোমাকে ভাবি , আর আমার হাতে ধরা মোবাইল জ্যান্ত হয়ে ওঠে । ব্যাঙের মতো লাফিয়ে পড়ে
আমার মুঠো থেকে । পড়ে , প’ড়ে দশ টুকরো হয় । দশ টুকরো দশ রকমভাবে বাজে । যেন বেহালা
বাঁশি চেলো সেতার সন্তুর পিয়েনোর আজব সিম্ফনি । আমার নেশা হয় , যেন এর আগেই আমার
নেশা হয়ে যায়নি মোটেই
২
তোমাকে
যখনই ডাকি , তুমি সাড়া দাও । এতবার রাস্তার ধারে বাইক থামিয়ে কথা বলা কি বিরক্তির
একশেষ নয় ! কিন্তু তুমি একটুও রাগো না । শুধু বলো – বাড়ি ফিরছি । কোথায় তোমার
বাড়িঘর , ও পুরুষ , যেখানে কোনো নারী নেই । আর সেইজন্যেই রাগ অভিমান মারামারি
আকচাআকচি খিমচাখিমচি – এসব মানবিক গুণের ও স্বাস্থ্যকর ব্যাপারে কোনোদিন অভ্যাস হল
না তোমার
৩
এত একা থাকা
ভাল নয় । নিয়ে এসো ক্রিস্টালের নগ্ন নারীমূর্তি কোনো । সাজিয়ে রাখো , গুছিয়ে রাখো
শো কেসে , যেখানে মাপে মাপে ধরে যাবে , এমনকি , তুমিও
৪
মাথায় ডাভ
শ্যাম্পুর ফেনা । ফেনায় বুদবুদ । তাতে সূর্যের সাতরঙ । এত সব ন্যাকাপনার কোনো
কারণই হতো না যদি না জানতাম তুমি ছেঁটে এলে পোনিটেল করা চুল
৫
আমি কি তোমার
প্রতি একটু বেশিমাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি ? রোজ রাত্তিরে এই কবিতার ফোনালাপ । এর
আগে আমি একটাও কবিতা পড়িনি , জানো ? এখন মনে হয় সব আমার লেখা লাইন তোমাকে উদ্দেশ
করে । আমি কি কবিতার প্রতি পজেসিভ হয়ে পড়ছি আজকাল
৬
রোজ রাতে ঘরে
ফিরে রান্না করা স্নান করা ও খাওয়া , না না রোজ রাতে রান্না করে স্নান তারপর খাওয়া
, হলো না , রোজ রাতে ঘরে ফিরে খাওয়া রান্না করা ও স্নান , নাকি রোজ রাতে বাড়ি ফিরে
স্নান খাওয়া ও রান্না করা
ধ্যাত্তেরি ,
আসল সিকোয়েন্সটা হলো , না খেয়ে না স্নান করে না রান্না করে ঘরে না ফেরা
৭
তোমার সাথে কথা
না বলা অবধি শান্তি নেই । সারাদিন মনের মধ্যে বাসা বেঁধে আছে বাসনা । এটা কি মিল
হলো কোনোরকম , খুব ফেটালে তেলে জলে যেমন আপাত-মিশ্রণ হয় ? আমি কিন্তু , সত্যি বলছি
, ততটা ফেটাইনি ঠিক । তোমার-আমার সম্পর্ক বলে কিছু নেই , এ-কথা মনে রেখে তোমার
সঙ্গে কথা বলি সংযুক্তাদির কবিতা বিষয়ে , আর তুমি বলো যোনি ব্লিচ করার কথা
৮
তোমার সামনে
কেউ পেতে দিয়ে গেছে দীর্ঘ সুড়ঙ্গ এক । তুমি তাকে জরায়ুর নালি ভেবে সঙ্গম করলে , আর
তোমার বীর্য-পতনে সুড়ঙ্গে প্রাণের সঞ্চার হলো । একঝাঁক চামচিকে ও শতসহস্র ইঁদুর
ভেদ করল জরায়ু মুখ । ন’মাস পর পয়দা হলো একশো আট পাউন্ড ওজনের পেল্লায় এক পাথর , যা
তুমি একা হাতে টেনে হিঁচড়ে বন্ধ করলে সুড়ঙ্গের মুখ , তারপর বললে চিচিং ফাঁক ।
দেওয়াল দু-ফাঁক হলো না , এবার তোমার আগেই নতুন কোডে কেউ পার্সোনালাইজ করে গেছে
তাকে
অনিন্দিতা গুপ্তরায়ের দীর্ঘকবিতা
কর্কট-সংক্রান্তি
ছোট্ট একটা বিন্দু, লাল আর
উজ্জ্বল...স্বচ্ছ পাতাটার ওপর...একটা তীব্র বিন্দু । আচ্ছা , বিন্দু থেকেই তো
বৃত্ত আঁকা হয়... আর বৃত্ত কে কেন্দ্র করে জমা হতে থাকে আরো আরো বড় বৃত্তগুলো...একেকটা ঘূর্ণী...টেনে নেয়, ছুঁড়ে
ফেলে দেয়, ফুঁসে ওঠে । একটা চন্দ্রবিন্দুর দিকেও নিয়ে যায় কি ?
সেরকমই বিস্তৃত হচ্ছিল
পরিধি, আর পাড় ভাঙছিল । অল্প অল্প অথচ ঋজু আর দ্রুত । কোথাও কোন পুর্বাভাস নেই । নিঃসাড়ে একটা
সরীসৃপের এগিয়ে আসা...ঠান্ডা, নির্ধারিত, সতর্ক ।
তো সেই বিন্দুটাকে ঘিরেই
একটা গাছ বেড়ে উঠছিলো...মাধ্যাকর্ষণের উলটো দিকে ।
শিকড় গভীর হচ্ছিলো ,
প্রস্তুতি চলছিল উপড়ে ফেলার, মাটি থেকেই । অভিকর্ষহীন হতে হতে
এই শরীরটা খুব হালকা একটা বেলুনের মত ওই চাঁদের দিকে ...ভাসতে ভাসতে...আরে
কেয়া বাৎ !
কবে বলেছিলাম আমার খুব তাড়া
আছে ? এই রক্ত আর ফিনাইল এর গন্ধের মধ্যে দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে নিয়ে যাওয়া কেন
বাপু ? শর্টকাট জিনিসটা বড়ো না-পসন্দ্ আমার ।
হ্যাঁ, গাছ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটার
মধ্যে বেশ একটা ইয়ে আছে, ওই শিকড়বাকড়ে বরাবর খুব টান বিশেষত ...দ্যাখ্ না দ্যাখ্
কিরকম কতদূর অব্দি বয়ে যাচ্ছে তলায় তলায়...টেরটিও পাবেনা...শিকড় দিয়েই তো পাহাড়ের
ধস আটকানোর কথা পড়া গেছে ভূগোল বইয়ে,
মৃত্তিকাক্ষয় ও প্রতিরোধ...সমুদ্র তটে গাছ লাগানো...ঝাউবন.....তবু ....লবণের বদলে
কেন যে বালি উড়ে উড়ে চোখে মুখে ! জলখেলা আর ঢেউএর আড়াল ভুলে বালির গর্ত... কোথথাও
কিছু নেই...
নেই ? .....লাল লাল খুদে
খুদে কাঁকড়াগুলো ...?
তা সেসব না দেখে বরং ঝাউপাতা
দেখি, আর পায়ের পাতায় বালি জড়ো করে করে ঘর বানানোর খেলা...মন্দির । রথযাত্রা
। মাথায় একটা পাতা গুঁজে পতাকা । আচ্ছা
তখনি কি কাঁকড়াটা কামড়ালো ? ফুটো করে ঢুকে গেল জানু অবধি ? রথচক্র ভেদিবে মেদিনী?
তবে কি...
উফফফফফ...পাতাদের শব্দ,
হাওয়াদের গল্প থেকে কান ধরে টেনে এনে সরাসরি একটা ঠান্ডা ঘরের মধ্যে...কারণ
বিন্দুটা আর শেষপর্যন্ত বিন্দু থাকেনি । ব্লটিঙের ওপর লাল সুলেখাকালির ফোঁটার মত ওটা ছড়িয়ে যাচ্ছে
...খুব নিঃশব্দে বেড়ে ওঠা একটা ভূখন্ডের মত... আকৃতি পাচ্ছে ।
শিকড়ের বিস্তার কতদূর অবধি
যেতে পারে ...?
ধরুন এতটাই যে আপনি পুরোপুরি
একটা গাছ হয়ে যেতে পারেন...মানে ভেজিটেবল্ লাইফ তার আগে একটা চেষ্টা করতে
হবে, মানে ধরুন শিকড় সমেত পা অথবা যতটা দূর ওপড়ানো যায় ।মনে করুন একটা সমুদ্রে পড়ে
গেছেন আপনি হাত বাড়ালেন, সাঁতার জানেন না । আমরা পাড়ে দাঁড়িয়ে...সাঁতার
জানিনা...হাতে সামান্য খড়কুটো... সেটুকুই বাড়িয়ে দেব তো ? আপনি কি করবেন...? লড়বেন...লড়াইটা আপনার...
আসুন হাত বাড়ান...
আবার সেই সমুদ্র..ঢেউ মানে
তো সঙ্গম....আহ্ এত ঠান্ডা লাগছে কেন? এসি টা একটু কম করে দেবেন? মানে বাড়িয়ে
দেবেন? টেম্পারেচার...?
বৃষ্টি পড়ছে বাইরে...কাচের
বাইরে...শ্রাবণজল, নিতে এসেছ নাকি সত্যি ?
ডাক আসা অবধি অপেক্ষা
করুন...
আজকের ডাক এ চিঠি আসবে বুঝি
? কখন লিখলে...বলোনি তো..লালবাক্সের নির্জনে কোথায় ঘুমিয়ে আছে তোমার রাত্রিকালীন
অনিশ্চয়্তা...লুকিয়ে রাখা উদ্বেগ... আমাকে অন্ধকারে রেখে চলে যেওনা... নখের মধ্য দিয়ে তরঙ্গ ,
তেজস্ক্রিয়...সুচিশিল্প শেখাই হলোনা কোনদিন ,আর শরীর জুড়ে এফোঁড় ওফোঁড়...বৃষ্টির
জমা জল অপেক্ষার থেকে উঁচু হয়ে ওঠে । আর
চৌকাঠের অন্যদিকে ভাঙতে থাকে অন্য বৃত্ত । আরো আরো বিন্দুগুলো হাতের ওপর হাত রেখে
গোল হয়ে দাঁড়ায়, আগুনের মুখোমুখি । তাদের কেন্দ্রে বরফকুচি...শলাকার বিঁধে থাকা...নীল হয়ে থাকা
দীর্ঘতম নদীটির তীব্র উপকূল ...জন্মান্তর পেরিয়ে আসা হাতের পাতার আদর ...ওপড়ানো শিকড়ের ক্ষতে, পায়ের
পাতায়...
ততক্ষনে
গড়িয়ে যাওয়া বোতল লং ড্রাইভ
নিভে আসা সন্ধ্যা শপিংমল জেন ওয়াই ব্যাগপ্যাক আই টি সেক্টর ইনকাম ট্যাক্স টিভি
সিরিয়াল গুগ্ল সার্চ উপচে ওঠা ইনবক্স
অজুহাতের ঠাট্টা আর অন্ধকারের মত অভিমান .......সাঁ সাঁ করে টপকাতে টপকাতে মফস্বলি
ডেইলি প্যাসেঞ্জারির বাদামওয়ালা বুড়োটার তোবড়ানো মুখের হাসিটাও কিরকম রোজকার
মতই...
কাগজকুড়োনো মেয়ে, তোকেও
ঈর্ষা করি এক্ষুনি...কিরকম হেঁটে হেঁটে পৃথিবী পেরোচ্ছিস, জেব্রা ক্রশিং, ব্যস্ত
ট্রাফিক...
অনেকগুলো বিন্দু জুড়ে বৃত্ত
মুছে ফেলে, সরলরেখা টানতে টানতে দেখে নিচ্ছি অজস্র বঁড়শি নেমে আসছে .....ওই ওই...
বৃত্ত মুছতে মুছতে বিন্দুতে
ফিরে যাওয়া যায়না কখনো । শুধু সাদা
দেওয়ালের শূন্যতা খুঁজতে থাকে মাটি, পায়ের তলার । সমুদ্রস্নানে যাবো......আবারো ,
আবার । এই দ্যাখো পুচ্ছপাখনা , এই দ্যাখো ক্ষতস্থানে কিরকম নীলপদ্ম ।
মৎস্যকন্যার সেই গল্পটা...
পৃথিবীর তিন ভাগ ই তো জল,
বলো...
রাজেশ শর্মার কবিতা
গালিব
If u r married divorce speed
(যেন একটি হাইওয়ে প্রবাদ)
গতিহীনতার টি-শার্ট পরালাম
এই তো হাওয়াপাগলা সময়
ফেরত পাঠাচ্ছে সকাশ
দখিনে ধরা আছে আঙ্গুলাংশ
ভ্রমিত বেলায়
তীব্রতাই ভালোবাসা হচ্ছে না এখনও
রঙ্গীত মিত্রর কবিতা
ইউনিট-১ থেকে...
আমি
ইউনিভার্সিটি পার করার পর অনেকগুলো লরিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।
এখানে
গ্রাম-বাংলার মাথায় টুপি আটকানো।
চশমা
এখানে পর্দার মত কাজ করে
কাপড়
দিয়ে ওরা জানলা ঢাকতে চায়।
অতো
সহজ না কি?
কত যে আর শিখতে হবে আমি জানি না
সমস্ত
চুক্তিই ভারত-পাকিস্থানের মতো
বন্ধুত্ব
চায়নার পাঠানো ইলেক্ট্রনিক্স গুডস।
এখানে
অতিরিক্ত না বা হ্যাঁ বলে কিছু নেই
অর্থহীন
নারীরা ভেসে বেড়ায়
আদম-ইভের
ছবি ছাপা হয় টাইমসের পাতায়
এখন
এমনই সময়
ইন্টারনেটে, একটি
মেয়ে কলেজ-স্ট্রিটেরও লিঙ্ক জানতে চায়।
স্বপ্নিংমল
নতুন
নতুন মেয়েদের সাথে আলাপ হয়।
আলাপ
হয় নতুন নতুন চিন্তাদের সাথে
আর
আমি যখন-ই সেই হ্যালুর ভিতর ঢুকে যাই
বাবা
আমাকে ডাকে
আমাকে
ডাকে আমেরিকা আমাকে ডাকে কেরিয়্যার
যদিও
কেউ কেউ কেরিয়্যার করবে না বলেও
ক্যারিয়ার
করে বলে
চে-এর
ছবি থাকে আসিফের টিশার্টে
আমার
মা বলে খাওয়ার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে
আর
আমি ট্রেনের আওয়াজ শুনি পূজোর বাজনার মতো
আর
কিছু লোক দেখি যারা বাজারে যাবে না বলে স্বপ্নিং মলে যায়।
ধীমান চক্রবর্তীর কবিতা
দৃষ্টি
গান,সূর্যাস্ত,ছেঁড়া খাতা
জুড়ে দিচ্ছে সন্ধেগুলো ।
গোধূলিতে আঁকিবুকি দেয় বন্ধ চোখ ।
আমার ছায়াকে আজ ঘরে বন্ধ করে
রেখে এলাম ।হাঁটাচলার শব্দ
কোনওদিন আগুনে ভয় পায়নি ।
পিছনদিকে অনেকটা হেঁটে আমি আমার
বাবার জন্মদিন দেখতে পাচ্ছি ।
দর্জির দোকানে জামার সঙ্গে সেলাই করা হয়,-
না দেখা স্বপ্ন গুলো ।
সাদা পরিস্কার রেকাবে নামতে নামতে
সকাল জানতে চায়, কত গভীর
এই
তরলের ছায়া ?
চোখ খোলা রেখেও
কত কী যে দেখতে পাই
না !
খালি মনে হয়,- আরও একবার
বেঁচে নিই নিজের দ্বিতীয় জীবনে ।
স্মৃতি
কারোর কথা ভাবলে, সে
পর্দার মধ্যে মিলিয়ে যায়। যে কাগজে
নাম ছাপা হয়েছে, তা দিয়ে
মুড়ে দিলে দুঃখী রাঙাজবা।
যাদের সাথে অনেক গল্প হল,
সেই ছবি ছুঁয়ে সারাটাদিন,সারাটারাত।
বর্ষার দিনেও,আজ কোনো বৃষ্টি হয়নি।
এক বান্ডিল তাস রঙিন বিজ্ঞাপনে।
গাছের স্মৃতিতে প্রতিবেশি মুখোশ
রোদ
রোদ খেলে।
ডাকটিকেট দেখে শিশুটি দেশ গুনে তুলছে।
পাশে বসে, মুখে হাত রাখা
অন্ধকারের ডাকনাম নিয়ে ভাবছো।
সন্ধেবেলা-ঠিকঠাক ফুটে ওঠেনি আজ,
এরকম ভেবো না। তোমার
আঁচলে হাত মুছে সে
চুপচাপ বসে আছে,পৃথিবী ও
আমার ঘুমিয়ে পড়া ছায়ায়।
শেখা
এই কানাগলি,রেলিং ও
সিম্ফনির শহরে,চলমান বলতে
একমাত্র মানুষের চোখ।
শুনেছি গাছের তিনটে হাতও হেঁটে যায়।
সোনালি আর সবুজ মেখে
দুপুরগুলো মারা যাচ্ছে।
যাই শিখতে চাই না কেন,
শেখানে একটা বাঁশি পাশ ফিরে শুয়ে থাকে।
জল অনেক ভালো গান গাইছে,
শরীরের চেয়েও।
পাখিদের রাগ ভাঙানোর জন্য,
কোনও কোনও দিন
জোনাকি জ্বলে ওঠে সকালবেলা।
চুম্বক কারোর কারোর শরীর
টেনে নিয়ে যায় আগুনের দিকে।
আমি তার নীচে,-জন্মদিন,
ইশারা ও জাতীয় সড়ক পেতে
এলাটিন বেলাটিন পড়তে থাকি।
গমন
অনেক সন্ধ্যা গাইতে গাইতে এখানে এলে।
সাদা ক্লাসঘরে নিভু নিভু আলো।
কাঁটাতার দিয়ে কে যেন এই শহরে
আটকাতে চায় হলুদ আবহসংগীত।
শুভরাত্রির ভেতর হাঁটাচলা এই দেশলাইবাক্স।
পাঁচজন মুখোশের টুকরো হাসি,শরতকাল।
রাস্তাবাতি মেয়েটির তিল ছুঁয়ে বসে আছে।
মৃত্যু তাকে প্রতিবিম্বের আলো শোনায়।
বহু মানুষ
সারা জীবন ভুল ও ঠিক-এর মধ্যে
পার্থক্য করে উঠতে পারে না।
সমস্ত আলো ও অন্ধকার
জ্বলে ওঠার পিছনে
কার যেন হাত খেলে বেড়ায়।
আনমনে ঘুরে বেড়াই চিঠি ও এলোচুলে।
আর হাত যেন-
কোনও বেয়াদপি না করে একথা ভেবে
আমার পকেটে হাত নিয়ে ঘুরে বেড়াই।
পার্থ প্রতিম রায়ের কবিতা
বৃষ্টি ...
উচিত দূরত্বে
ভাবতে ভাবতে গল্পের ওপারে মেঘ-অ্যালবাম...
"বৃষ্টি"
-পুনরায়
লিখছি
অর্থবহ
কোন উদ্দেশ্য নেই ...
"বৃষ্টি"
জোর
করে শেষ করছি
এভাবে
লেখা ঠিক নয়
যেভাবে
কিছুই লেখা হয়না
এভাবে কখনোই
কাউকে কিছু বোঝানো যায়না বলেই_____
কিঙ্কিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
কলকাতায় , হে মৌন
প্রিয় ...
অন্যথায় মৃত্যুসুখ
কিংবা দুমুঠো নুন-ভাত
বা একজীবন প্রেম
এই তো চেয়েছিলাম
এই ধোঁয়া ওঠা কফিকাপে
এই বৃষ্টি ভেজা কলকাতায়
কালো মেঘে স্থির
ভিক্টোরিয়ার সাদা পরী
আর তোমার এসএমএস আসে
‘বিকেলে থাকবো সিসিডি তে’
এরপরেও চাই দিবাস্বপ্নের আশ্রয়
বা কালো জলের মৌন হাতছানি?
সব ডাক তুচ্ছ করে দেব
যদি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাও
এই কলকাতা থেকে কবীর সুমন হয়ে
আবার কলকাতায়
গড়িয়া-তারাতলা-এইট বি’র মধ্যবিত্ত ভিড় ঠেলে ঠেলে
আমাদের অল্পস্বল্প গেরস্থালি হবে
লুকিয়ে সিগারেট হলেই ফাটাফাটি
কথা বন্ধ সপ্তাহের শেষে
একটা চুমুতেই রাত কাবার
তাইতো বলছি
ফিরে এসো এ শহরে
তোমার জন্য কলকাতায় আজ
মন্দাক্রান্তা ছন্দ...
সুবীর সরকারের কবিতা
গণতন্ত্র
সেমিকোলন ও নির্জনতা
শিকার কামড়ে ধরা ঠোঁট
গণতন্ত্রের গা ঘেঁষে নতুন
গহনা
হাত
আবার হাঁটুর মধ্যে থুতনি
থালাবাসন বাজিয়ে ধিক্কার
চা্রপায়ে ঘোড়া সাজি
আবার লিখতে শুরু করে
হাত
স্বপন রায়ের কবিতা
রিয়া আবার-১
তবু সরু গোঁফ তবু দুঃখ পিস্তলের কাল চাঁদ কাল অপেক্ষা নিয়ে ঝিঁ ঝিঁ
আর বিবি সাহেবের অল্প দূরে বা সেটা ঠিক নয়
সে টা কি
বাজে শব্দ
শুধু টাটা করতে গিয়ে বিবি খড়ের দিকে টাল..টাল
পাখি জানে
তোলা,গুঁজে দেওয়া এসব খড়ের স্পোকেন পিস্তলের শিঁউ উ উ ন এরকমই সাক্ষাৎ রোদ
এই মাত্র হলো
কাৎ করা বিজুরিকামাল হয়ে গেলো রে
বিবিও হাসছে ভোর বলে গড়ে ওঠেনি বলে
রিয়া আবার-২
কিছুই না করে বলা,চেন টানো পুল পুল
সবই তোলা
কি হয় তুললে,কল্পার আপেল তুলে কলকাতায় পাঠালে কি হয়
কথা
কথারা আশ্চর্য ঘটনা বলে ক্লাসে যায়না ধরে থাকে বিবিয়ানা
রোদ
গ্রীলিশ
হয় নাকি
কথা হয় নাকি,মনে হবে না একবারো,কথা এক নির্মল গ্রাম
রাখলে ভালো হত ...
রিয়া আবার -৩
হাসিতে চিরুনি লাগানো তল্লাশ
তুলে নিই তুলে দিই
বিপিএল মরিয়ম বিপিএল মার্শাল
শুধু জল হয়ে
নদী হয়ে বর্ষা-পাখিতে পাখিরা হয়ে
তার জ্বর
তার চার্চের দিকে চলে যাওয়া আর যে গান গায় যে দিগন্তে থাকে
কিন্তু ধরা পড়ে না
পড়েনা পড়েনা সেই লুউদাস
ঋষি সৌরকের কবিতা
গ্যাংব্যাং
এই সমাজ -অ্যাক বিরাট
অন্ধকার ! তার বিরাট মুখ আর দ্বিতীয় মুখ
না বোঝা
যায় না কোথায় কি,তবু অদৃশ্য না দৃশ্যত কিছু
আঁধারবলয়মায়াডৌলতনুমন্মার্জিন্মৈথুন্সেমেয়েঅ্যাক্তার্জন্যপাগোলেইহিয়াজিয়াগোলাকারগর্তদেশকাল সময়
তার নাম
সবচেয়ে বড় হিরো আমার
মুনমুনের প্রেমে
পড়েছে মুনমুন
কি ভালো
অ্যাকটা মেয়ে
জন্মান্ধ অথচ
পূর্ণ কোনো
অন্ধ এতো
সুন্দর হয় কিভাবে জানা
নেই হ্যাঁ
ওর লালা
লেগে আছে
আমার জিভে
আমার জিনজনু
ওর বুকের
বোঁটায় সমাজ
সে অ্যাক
বিরাট অন্ধকার কায়েম রহে
গর্ত অনন্যমুখ না অন্যমুখ বোঝা যায়
না সেই
অন্ধকারে মুতে
দিয়ে গ্যালো
কয়েকটা ফর্সা
বিদেশী লোক
কেউ কেউ
এভাবেই গতানুগতিক ধার্য্য করে
ফেমাস হোলো
বৌ এর কাছে কেউ
কেউ বললো
পানু - আমি বাবা ওসবে নেই
গাঁঢ মারাক
এই দুনিয়ার আগাপাছাতলা আমি
বাবা খাই
দাই কামাই
আর রাতে
বৌ এর মারাই আমি
বাবা দাংগা-হাংগামায় নেই
শোশুর বারিতে
কদোর আমার
খুব আমি
বাবা সাধারোন লোক ছোট্টো
নুনু ছোট্টো
মোন এই আমার মোটামুটি মোটো যে যার নিজের
বৌয়ের হিরো
আমার বৌয়ের
প্রাচীনহিরো আমার
বাবার প্রাচীনপ্রেমিকা আমার মায়ের প্রাচীন্দালাল খরচা করে চর্চা
করে আর সেই ভুতুড়ে
বাঁশির হুট
বেজে ওঠে
গভীর কালোর
স্থির জলার্ধ
থেকে কটুগন্ধকটুশব্দকটুআনন্দ খিঁচুড়ির মত ঘেঁটে
যাচ্ছে জাগতিক
বোধ আমি
বাবা ভগোবান
মানি বরফশীতল যন্ত্রনাতে পুড়ি
আলোশব্দকালোশব্দ থেঁতলে
দাও রসকষ আমি বাবা পা তুলে তুলে
চলি
বিশ্বজিতের কবিতা
কৌশল
তোমার চোখের ভাষা
নিয়মিত সে বিষের সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে
আরো ১০০০০ শব্দের লাগামছেঁড়া
ঝ
ন্
ঝ
নি
য়া ... আ ... আ ... আ ...
তুমি কামড়াতে জানো
চেপে ধরতে জানো
হলুদ
অথবা
নীলের
মতো
কোনো
এক মারণ পদ্ধতিতে
যেখানে মৃত্যু বলে কিছু নেই
বমি নয়তো মাথাব্যথার মতো
তাৎক্ষণিক একটা মানচিত্রের
ও
ঠা
না
মা ...
রোহণ কুদ্দুসের কবিতা
সমাহিত প্যাস্টেলের গল্পে
ক্রেয়ন বিলোচ্ছিলেন তৃতীয় বিস্ফোরণের
সময়
তাঁর প্রিয়তম স্বপ্নেএক ঝাঁক টিয়া
ডানা ঝাপটানোর অবসরে
ছুটির পর ক্লাসে আটকে পড়া কিশোরবেলার
আগলখুলে
দিয়েছিল দরজার শিকলঠুকরে
হাতে বোনা সে সোয়েটারে তখনও লেগেছিল
মরিচ ফুলের খুশবু
মথবলের আলস্য সারা দুপুর পায়ের কাছে বিছিয়ে রাখা
রোদ এবং আধখাওয়া আপেলের সুতীব্র সবুজ
ইউনিফর্মে মিশে
গিয়েছিল আদেশ না মানতে চাওয়া অস্থির
কিছু স্প্লিন্টার
নখের কোণে মোম খুঁজছিলেন তিনি অকম্প
দৃষ্টিতে শুষে নিচ্ছিলেন
একের পর এক ঘর জ্বলে ওঠার
অনিন্দ্যসুন্দর মেগাপিক্সেল
মঞ্চে যারা আলো পায় না
লোকে
বলে রাজার পার্ট কেউ রাজার চাকরি বলে
না
কারণ
ফুটলাইটের ওদিকে লোকটা তখন টেনে হিঁচড়ে নিজের একটা অংশ
বিলিয়ে
দেয় আওরেঙ্গজেব, ম্যাকবেথ, সিরাজদৌল্লা পারলে নিজেরঅর্ধেক
কেন
পুরো রাজত্বই টুকরো টুকরো করে বেঁটে দেয় উপস্থিত দর্শকের মধ্যে
তবু
কোনও রহস্যজনক কারণে কবির পার্ট কথাটা প্রচলিত হলো না আজও
ড্যানিয়েলের খাতা-কলম
ড্যানিয়েল ডগলাসের দাদু টাঁকশাল
ডাকাতির সময় এনকাউন্টারে মারা যান। পরে পুলিশি বিবৃতিতে জানা যায় তাঁর পিস্তলে
কোনও গুলি ছিল না। খবরের কাগজ থেকে পিস্তলটার ছবি ডায়েরিতে সেঁটে রেখেছিল
ড্যানিয়েল।
ছবি জমানো ড্যানিয়েলের শখ। জন্মদিনে
জিনিয়া আন্টির দেওয়া ক্যামেরা কাঁধে সে ঘুরে বেড়াতজঙ্গলে, পাগলাঝোরায়।হোমওয়ার্ক
খাতায় ইজিবিজি আঁকা হয়ে যেত রাফের মার্জিনে। মাকড়শার জালের ঝিলিক অনেক বেশি সুন্দর
কোয়াড্রেটিক ইকুয়েশানের চেয়ে। তাই একদিন বিকেলে হেডমাস্টারের চিঠি এলো ড্যানিয়েলের
বাবার কাছে। ক্যামেরাটা হাতছাড়া হলো।
নিখোঁজ খেলনা ক্যামেরার শোক ভুলতে
এখন ড্যানিয়েল অঙ্ক বইয়ের আড়ালে দাদুর গুলিহীন পিস্তলের ছবিতে আঙুল বোলায়।
ইন্দ্রনীল ঘোষের কবিতা
নিরুদ্দেশের জন্য বিজ্ঞপ্তি
অসুখের ছায়াগুলো গাছের বিভ্রম হতো
সে গ্রামে অসুখ হতো খুব –
নীল একটু দুলিয়ে দিলেই হাসপাতাল...
তারপর সারি সারি রোগিদের ব্যক্তিগত ছুটি
একা একা পাহাড়ে
ঘুরে বেড়ায়
একা একা
টিফিন-কোটো খোলে
সব বন্ধু হতে হতেই কখন যে বিকেল হয়ে যায় –
যেন টিফিন খুললেই বেরিয়ে আসবে দক্ষিনের ঘর
যে ঘরে আমার পুরোনো জিন্স
পুরোনোকে তাপ দিচ্ছে তার মা
আর মা টপকাতে টপকাতে আমরা ক্লান্ত হয়ে উঠছি
আমরা ক্লান্ত হয়ে উঠে পড়ছি একটা বিকেলে
অনেক উঁচুর অসুখ চিৎকার
করছে তার ছায়া
সে চিৎকারে কোনও শব্দ
নেই
শুধু গাছ
আমাদের মাইল মাইল বেঁচে থাকার ওপর
শুধু
পাখি বসে আছে
কাঁদতে গেলেও পালক হয়
জল খেতে গেলেও...
আমি নার্সকে বলি, ছুটিগুলো ভেজিয়ে দাও, আমার ঠাণ্ডা
লাগছে...
ওগলানো পিয়ানো থেকে বেসুরো কৃষক বাজাচ্ছে যে লোক
ওগলানো পিয়ানো থেকে বেসুরো কৃষক বাজাচ্ছে যে লোক
তাকে ছিঁড়ে ফ্যালো
ওই তো তার নেভানো রঙের খুন
ওই তো তার হেরে যাওয়া সভ্যতা
নুয়ে পড়া দেশ
হারানোর সময় পরনে কী ছিলো, আমি জানি না...
রমিত দে-র কবিতা
বাজার
সিঁড়ির নিচ থেকেই বাজার
সিড়ির নিচ থেকেই দাঁড়িয়ে পড়া
সারারাত পিছু পিছু ছোটে বিস্মিত আয়রন
টাটকা শাকসবজিকে উদ্ধার করে ঘুম পাড়িয়ে
দেয় সাদা নার্স
আপনিও গরম জামাটা ফেলে এসেছেন ওখানেই
কফি ঢালতে ঢালতে যেভাবে গুলিয়ে বসে আছেন
চিনির জন্মদিন
কীভাবে বোতাম হাতে নিয়ে জামাগুলো জুয়ো
খুঁজছে !
আর চার চারটে মেয়ে হওয়ার পরে পেটের
বাচ্চাটা নষ্ট করে
মাঝরাতে ছেলের হাড় খুঁজতে বেরোচ্ছে আলো ,…
কেবল মশারি গুঁজে চলে
যাচ্ছে খাটভর্তি দেহ
বড় রাস্তার অটো,বৃষ্টির ছাঁটে ধুয়ে
যাচ্ছে তার ছোট রাস্তার সংসার
প্লীজ বলুন না,এই চমৎকার জমে ওঠা থেকে কীভাবে জল তৈরী হয়!
ঘর বলতে বলতে ঘুম পেয়ে যায় …
জর্দা দেওয়া একখিলি মেঘ মুখে দিন
কিন্তু ঝিমোবেন না,
বৃষ্টির যা দাম !
কাঠকুট জড়ো করে নরম বাগান দেখে ফিরে না
যায় …
ধম্মপদ-৩
শারিপুত্র
মহাকাশ্যপ অনুরুদ্ধ
আনন্দ
এরা আমাদের চার চারটে গাছ
আর
চেতোবিমুক্তি
ও
প্রজ্ঞাবিমুক্তি
এরা আমাদের দু দুটো ফল
যারা যারা গৃহপ্রবেশেরর দিকে গেল তারা
তারা দুই দিয়ে গুন করে চার করে নিল
গেরুয়া রাস্তার দিকে উৎসর্গ করল একটি ঝাউবন দুটি হাঁস
জানলা …
দরজা …
সিঁড়ি…
ঘর বলতে কেবল জালসংহিতা
নদীটা কিছুতেই ফুরোলোনা ...
বাকি গাছগুলোর উঠোনে বা রান্নাঘরে কেউ
ছিলনা
ন্যাড়া ছাদে গিয়ে কাটা ঘুড়ি লোটার
ধান্দায় চাবিটাও ছিল না তালার সংগ্রহে ,
যার ফলে গোটা একটা
দীর্ঘশ্বাস,দেখ,কীভাবে টেলিগ্রাফ তারে শালিক হয়ে গেল
অভিকর্ষও নামাতে পারল না
এত নশ্বর !
‘আয় ডাকের’ কাছে কপালটা ছড়ে গেছে শুধু
আর নিচু হতেই ফুলেরও খসে পড়েছে আঁচল
বুকও সামলায়নি ……বোতামও খোঁজেনি
শুধু ‘একটাই জানলার একটাই শিক’ ভেঙেছে …
7khub bhalo hoyechhe anupam. Rangeet er lekha ektu badlechhe dekhlam. Shyamalda,anidita, rohoner lekha darun laglo. Atanu amake mugdha korechhen. Keep it onn :D
ReplyDeleteaamr ae lekhagulo kemn laglo go? jano
DeleteRangeet
Valo laglo Mondakranta di'r, Ric o Rangeet dar kobita
ReplyDeleteকবিতাগুলো বেশ । বিশেষ করে রমিত দের নবাবিষ্কৃত 'সারদামঙ্গল'(যদিও বললে ফের গরীব লোকের টাকা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ! ) না না , jokes apart ... অসামান্য কাজ !/
ReplyDeleteঅসংখ্য ধন্যবাদ মন্দাক্রান্তা দি-- :)
Deleteকারো নাম উল্লেখ না করেই বলা যায়, কবিতা বিভাগটি বেশ হয়েছে। এরপর আমার গদ্যটা তো পড়তেই পারলাম না এত ছোট ওক্ষর কেন? কিছুতেই বাড়াতেও পারিনি। কী করি? বাকি এখনও পড়া বাকি। পড়ব।
ReplyDeleteফন্ট সাইজ বাড়িয়ে দেওয়া হল ।
Deletesaradin dhore sob bibhaggulo porlam....kabita, harano janla, galpona, onyo bhasar kabita, ei sankhyar kobi...konta chhere konta.....fire fire porchhi , porbo....
ReplyDeleteshubhechha....
বিহারীলাল'কে পুনরাবিষ্কারের জন্য অভিনন্দন।
ReplyDeleteধন্যবাদ সপ্তর্ষি- :)
Deletearo ekti osdharon proyass !....praptir hisebe ni gieo bola jay.....onek kichui pelam..bhalo laglo alada kore Debjani bosu, Atanuda, subir sorkar , Dhiman, Rohoner 2nd lekhaTi , indranil ghosh er 'nirudwesh..." ...porchi tai er besi ekhuni kichu bola jabe na...
ReplyDeleteঅর্জুন অসামান্য অনুবাদ করেছে। জিও ব্রাদার...আমি বুদ হয়ে গেছি কবিতা গুলো পড়ে। কি ভীষণ ভালো কবিতা।
ReplyDeleteসত্যি কথা বলতে বাক এর কবিতা বিভাগ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু রাখেনি এত অসামান্য সব কবিতারা--নতুন নতুন নিরীক্ষা নতুন নতুন ভাবনা -এক সাথে এত চূর্ণসত্তা কেবল কবি নয় পাঠককেও আমার মনে হয় অনেকটাই সমৃদ্ধ করবে-
ReplyDeleteযদিও কবিতার অনুবাদ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত একটা ধারনা আছে,এবং সেখানে আমার মনে হয় কোনো কবিতারই অনুবাদ সম্ভব না কেবল স্থানিক অনুনাদের প্রচেষ্টা- তবুও এবারের অনুবাদের দুটি বিভাগের ভালো লাগার দুটো কারন
প্লাম নেট ভার্সান শুরু থেকেই পড়ি,সেটাই বারীন দা বাংলায় নিয়ে এসে বোধগম্যতার অনেকটাই কাছে এনে দিল,সাথে অনুবাদে বারীনীয় ছোঁওয়া
অন্য ভাষার কবিতায় অর্জুনের এবারের কাজ সত্যি উৎসাহ দেওয়ার মত, যার ফলাফল-এ কটা কাজ পড়ে পুরো বইটাই আমি ওর কাছ থেকে সংগ্রহ করি-
উমা দার গদ্য যথারীতি সুন্দর-ভালো লাগল
গল্পনা,পাঠম্যানিয়া আর নীলুর উপন্যাস আর সাক্ষাৎকার বিভাগ আজ পড়ব,পড়ে জানাব--
ব্যক্তিগতভাবে শেষ কয়েক সংখ্যা থেকেই মনে হয়েছে বাক কোথাও সমসাময়িক কবিতায় একটা নতুন রুচি নতুন রেসোনেন্স নিয়ে আসতে পেরেছে-আর সব থেকে বড় ব্যাপার প্রবীন ও নবীন সব কবিরাই এই অনুরণনে সাড়া দিয়েছে--
এ সংখ্যার কবি -হিসেবে প্রবীর দার লেখা প্রায় প্রতিটা কবিতাই বার বার পড়ার মত,
ReplyDeleteসারাদিন এসব কবিতার মধ্যে থেকে থেকে মন ভালো হয়ে যায়।
সত্যি কথা----
সোমনাথ দে
ReplyDeleteপ্রবীর দা অনবদ্য ... ইন্দ্রনীল "আমাদের মাইল মাইল বেঁচে থাকার ওপর.
শুধু পাখি বসে আছে.." কেয়া বাত ... পড়ছি
পঞ্চাশ বছর পর আরেকবার সারদামঙ্গল পড়লুম ।
ReplyDeleteরমিত, তুমি আমার শ্রদ্ধা অ্যাকসেপ্ট করো ।
আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম নিও মলয় দা-
Deleteতোমাদের মত সিনিয়রদের মতামত সম্পূর্ণ বাক-এর পক্ষেই চরম উৎসাহ জোগায় আরও নতুনভাবে এগিয়ে যেতে-
Dear Anupam,
ReplyDeleteI am deeply impressed by your tireless efforts in Bak. Congratulations!
Warmly,
Chinmoy da
লেখাগুলো আমাকে মোহিত করল...
ReplyDeleteএতো অল্প কথায় এতো সুন্দরভাবে কথা বলতে পারেন প্রবীর রায়! এক ভালোবাসাময় একাকীর ছোঁয়াচ তাঁর কলমের পরিমন্ডলে। কারণ তিনি জানেন, 'এর চেয়ে বেশী বলা যায় যদি রোদের নমুনা নিয়ে রেখে দিতে পারি'।
ReplyDeleteValo laglo besh kichhu valo kabita porlam. Specially Shayaml kanti-r lekha pore mone holo, baro kabike alada vabe chenate hoy na. Bak-er prayas dirgha jiban lav karuk. Anek shuvechha.
ReplyDeleteকবিতাভাষান-এ মুগ্ধ হলাম Kimiko Hahn-এ। যথার্থই বলেছেন বারীন দা... "...তার কবিতার ভুবন বদলে গেছে এক অসামান্য চলনে যা সচরাচর দেখা যায় না।"
ReplyDelete--- নীলাব্জ
বাক পত্রিকা থেকে কিছু কবিতা কশেরুকে সকলকে পড়ানোর জন্য চাই। বিশেষ করে জাপানী কবিতা খুব ভাল লেগেছে। আপনার অনুমোদোন পেলে খুব ভাল লাগবে। অন্যভাষার কবিতা থেকে। লেনিন, নিউটন, সুপারম্যান, অসম্ভব সুন্দর লেগেছে । শ্যামলকান্তি দাশ এর কবিতা খুব ভাল লেগেছে ।
ReplyDeleteখুব ভালো
ReplyDeleteপ্রলয় মুখার্জী শ্যামলকান্তি দাশের পাশাপাশি ঋষি সৌরক ও কিছু কোর্ছেন
ReplyDeleteবাংলা কাব্বো-গোরিমার গগোনচুম্বী গোডাউনে ।
একটা পার্সোনাল ... থাক্! ডাক্তার বেশী বোকতে বারোন করেছে বোলেই আর ডট ডট ডট পুটকি
বাক কে আমি ওয়াক ডাকি (সম্পূর্ণ প্রোবাসী বাঙ্গালী ঘরানায় বেড়ে উঠতে উঠতে রেগুলার আনোন্দোবাজার পোড়েছি বোলেই হয়তো)
ReplyDeleteখুবি নিরীহ গোছের কিছু কামোড় অস্থানে ফেরোত পেয়ে যার পর নাই (বাস্তোবে কেউ পর না কেউ কেউ পর্ণা ক্রিয়েটিভ যন্ত্রোনার উদগার কারোণ আমরা সকোলেই সেই জগোদগুরুর বাড়ির ছেলে,মামাবাড়ি বোলে যা হয় সব মিথ্ ...) প্রীতো হোলাম । মাঝেমাঝে তছ্নোছ্ - খিমচি - সামুদ্রিক হাওয়ায় হাল্কা স্যাঁকা এবোং লাইক না দিয়ে সোজা কমেণ্ট কোরে দেওয়া যৌবোনের লোক্ষোণ বিশেষত সেই যৌবোন যদি বোনলেস হয় - বোনলতাপাতাফলমূলবিচীলেস একটু ডেপথের সোন্নাস যা কিনা গেরুয়া হলেও স্লিভলেস না,হুঢ়ুড় কোরে একগাদা হ্যাং আউট এড়িয়ে গেলা ব্লো-ওয়াক্ ব্ল-ওয়াক্ বা ওয়াক ন্যাচুরালি। জাবোতীয় বিভাগ থেকে অনতিদূরে কোবি কোবি জাবোর চুইংগাম ক্যালোরি ফ্রি
আহহহহহহহ ! প্রোতিটি কোবিতাঈ গোভীরভাবে দাঁড়ানো শুধু একটি কোবিতাঈ গন্ধোগোকুলের ন্যায় টি আর পি বাড়ায়
ওতিরিক্তো তক্লিফ - আপনারা জোদি একটু মন্দাক্রান্তা সেন কে ট্যাগ কোরে দীতেন :O
শ্রী অনুপম মুখোপাধ্যায়ের প্রতি,
ReplyDeleteঅত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ এই বাক পত্রিকায় দেখলাম। অতীতের জানালা আর অনুবাদ অংশ বেশ ভাল। অন্যান্য বিভাগেও মৌলিকতার ছাপ যথেষ্ট।
ধন্যবাদ।
আমরা ক্লান্ত হয়ে উঠে পড়ছি একটা বিকেলে
ReplyDeleteঅনেক উঁচুর অসুখ চিৎকার করছে তার ছায়া
সে চিৎকারে কোনও শব্দ নেই
শুধু গাছ
আমাদের মাইল মাইল বেঁচে থাকার ওপর
শুধু পাখি বসে আছে
কাঁদতে গেলেও পালক হয়
জল খেতে গেলেও...
আমি নার্সকে বলি, ছুটিগুলো ভেজিয়ে দাও, আমার ঠাণ্ডা লাগছে...
ওগলানো পিয়ানো থেকে বেসুরো কৃষক বাজাচ্ছে যে লোক
তাকে ছিঁড়ে ফ্যালো
ওই তো তার নেভানো রঙের খুন
ওই তো তার হেরে যাওয়া সভ্যতা
নুয়ে পড়া দেশ...
আহা! কি লেখা!