তাহলে শেষ পর্যন্ত ৭৫তম পোস্টও হয়ে গেল। মনে আছে, এক সময় ভেবেছিলাম ৫০তম পোস্ট করেই ‘বাক্’-কে বন্ধ করে দেব। মনে হয়েছিল তারপর আর প্রমাণ করার কিছু থাকবে না। আজ বুঝতে পারছি প্রমাণ করার কখনোই কিছু ছিল না। প্রমাণ করার কিছু থাকে না।
আগেই বলা হয়েছিল, ৭৫তম পোস্ট নিয়ে আলাদা কোনো
হুল্লোড়ের দিকে আমরা যাবো না। ৭৫ তো স্বয়ং একটি উৎসবের নাম। আলাদা করে ঝলমলিয়ে ওঠার প্রয়োজন সে ফুরিয়ে দেয়।
প্রচুর কবিতা রাখলাম এই পোস্টে। কেন রাখবো না? ২ মাস পরে ‘বাক্’ আসছে। পাঠকের যে খিদে পেয়েছে প্রচুর, সে কি জানে না? ষোড়শোপচার রাখা হল তাই।
প্রতিটি বিভাগ কিন্তু সেজেছে। যথারীতি।
আপনার অপেক্ষায়, পাঠক …
অনুপম মুখোপাধ্যায়
নীলাব্জ চক্রবর্তীর কবিতা
প্রিল্যুড
যেকোনো কথার ভেতর
ঘুরেফিরে আরও একটা কথা
তার যাবতীয় আভা
ও মাংসল সম্ভাবনাগুলো নিয়ে
লালচে বোতামবিলাস নিয়ে
ব্যক্তিগত হয়ে যাচ্ছে
ভুলে যাওয়া দরজাটার কাছে এসে
কীভাবে
সিঁড়ির গোলাপী ধাপের ভেতর
ফেলে যাচ্ছে সমস্ত মৃদুজল ও খরজলের শীতরেখা
ওখানে যৌনতার কথা
আসবে আসবে করেও
ফেনার গায়ে ফেনা জড়িয়ে যাচ্ছে
এড়িয়ে যাচ্ছে
দৃশ্যগুলোর
বিবাহবহির্ভূত কাটাছেঁড়া
আর লম্বাটে খুব ছায়া ছায়া
বেঁকে যাচ্ছে
হাফছুটির পুরনো রাস্তায়
তার আস্তিন থেকে খুলে নেওয়া প্রিল্যুড...
ডার্করুম
আইসক্রিম শহরের দিকে
গ ড়ি য়ে
দেওয়া হোলো
কয়েক লাইন আঁকাবাঁকা ছায়া
যেখানে হেমন্তে খুব অ্যাসাইলাম ফুটলো সেবার
একটা গাঢ়তর ডার্করুম
প্রত্যেকের আলাদা দরজা আলাদা আলাদা পাখিরং
একেকটা কথাবলা দেওয়াল
কীভাবে আয়না হয়ে যায়
ওইখানে গিয়ে
আর
আমাদের সবার জন্য
একটাই দীর্ঘ ওয়েটিং আওয়ার থেকে
বিলি করা হোলো
সাদাকালো চেক-ইন কাউন্টার ...
চশমা
পকেট সাইজ স্তব্ধতার ভেতর
দূরে
শীত পড়ার শব্দ
নতুন ফাইবারে
চোখের ডাক্তারের ওই যন্ত্র
থেকে
>>
--- দৃশ্যান্তর --- <<
ফুটে উঠলো
আরও একটু বেশী
বেরিয়ে এলো
এক সাদা বেড়ার
পা
র
পে
ন্ডি
কু
লা
র
কথা বলছে পকেট সাইজ
কথা বলছে স্তব্ধতার ভেতর
সাদা হারমোনিয়াম
আর
সহজ হয়ে আসছে
বরফ ভেঙে ফ্যালার
ক্রিয়াপদগুলো...
মাসুদার রহমানের কবিতা
প্রেমেরকবিতা
মেঘগুলো ভাসিয়ে দিচ্ছে সবুজ মেয়েটি।
সেই তো ডানহাতে সমুদ্র ধরে বামহাতে
পর্বত রেখেছে
ওর দু’হাতের দূরত্বের মধ্যে
মৌসুমিবাযু
রং পিচকারি নিয়ে ফিরে যাচ্ছে বারবার
ফেলে এলাম সাঁকো পেরুনোর ঘড়ি!
আমি ভিজে যাব
20.10.2013
জিওগ্রাফি
খুব বরফ পড়ছে; স্কটল্যাণ্ডের দূর কোনো আদিবাসি গ্রামে
ফায়ারপ্লেসের কাছে উলের পোশাকমোড়া কয়েকজন এস্কিমো
এ তো ভয়াবহ শীত; হাতমোজা জ্যাকেট জুতো ও টুপি ছাড়া
বাইরে কেন?
আমার শিশুকে এই প্রশ্ন করেছি
মাথার উপরে তখনই সূর্য জ্বলছে
কালাহারিমরুপথে চালিয়ে দিচ্ছে বহু উটের কাফেলা
ওদিকে গরমে ঘেমেনেয়ে অস্থির আমার গৃহিনী
পৃথিবীকে ডিপফ্রিজের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে
বলছে; আমরা আবারও হিমযুগে প্রবেশ করেছি
23.10.2013
প্রভাত চৌধুরীর কবিতা
তালা-র নিকটবর্তী শব্দটি হল চাবি
তালা-র একার
কিছুই করার থাকে না
ঠিক তেমনই চাবিও একা একা কিছুই করতে পারে না
তালা এবং চাবিকে বিচ্ছিন্নভাবে গৃহসজ্জার কাজে
ব্যবহার করা যায় কিনা জানি না
অথচ তালা এবং চাবি একান্নবর্তী হলেই
হান্ডাতে তৈরি হতে থাকে বিরিয়ানি
ঢাকনাতে গনগন করে কাঠকয়লা
জাফরান কিনতে কাকে পাঠানো হয়েছে জ্যাকেরিয়া
স্ট্রিট
আর আমাকে তালাবন্ধ বা গৃহবন্দী করার জন্য
যে চাবিটি ব্যবহার করা হবে
তার নাম দিলাম বিশল্যকরণী
অতএব তালা কোনো নতুন কথা শোনাতে পারবে না
কথা বলার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে একটি
চাবিকে
যে চাবির কথা কিন্তু তথাগত আমাকে বলেনি
মুরারি সিংহ-র কবিতা
অলৌকিক ঝর্নাজল
অলৌকিক ঝর্নাজলে ঘর বেঁধে আছি
সর্বাঙ্গ দিয়ে স্পর্শ করছি ঢেউ ও গ্যালপিং
এক টুকরো আয়নায় দেখছি রোদ ও ছায়ার খেলা
ঋতুফুলের বিস্ফোরণে দেখছি প্রজাপতিদের ওড়াউড়ি
ঝিঁঝিঁপোকাদের হাতে অহরহ
অনাবিল খুন হয়ে যায় দিনলিপি
নারীর রোদ্দুর পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে আছে
জীবনের মাঝখানে
ঝিলমিল ঝলমল ঝমঝম
পরাগমিলনের সফটওয়্যার
আমার পিঠব্যাগের গর্ভগৃহ থেকে আজ সন্ধ্যার বাতাসে
বনহরিণিদের জন্য ভাসিয়ে দিলাম কিছু তীব্র
মনখারাপ
এবং শিশিরভেজা প্রেমিকদের জন্য কিছু বিশুদ্ধ
কাফসিরাপ
মাননীয় ধর্মাবতার তাই বলে আমিশাষীদের আদালতে
আমার জন্য বরাদ্দ করবেন না
অন্ধকারে দ্রবীভূত কোনো ভাঙাচোরা ও অনন্ত
কালবেলা
আমি তো শারীরিক নামতা কিছু ভুল বলিনি
কুলীন বলিরেখার প্রতিনিধি হয়ে আমি দেখেছি
স্ট্রিটলাইট ও স্টেশন-প্রেমের আওয়াজে
মাঝে মধ্যে ঢুকে পড়ে
নিটোল ও নির্ভেজাল
এক বুলেট-প্রুফ গোপনীয়তা
আমি তো জানি
শঙ্খবেলার ঘাতপ্রতিঘাত
নৈরঞ্জনা নদীটির জীবনযাপনও
আমার অজানা নয়
অবেলার রাজপথ ও অলিগলি থেকে
আমার একটি পদচিহ্নও
আমি প্রত্যাহার করছি না
আমি হেঁটে যেতে চাইছি
আরো আরো ওড়না-বারুদ
আমি মুঠোয় পেতে চাইছি
আরো আরো মচকানো জীবন
আমি শরশয্যার ফ্ল্যাশব্যাকে রাখতে চাইছি
একটি রাতুলফুল
ও পরাগমিলনের সফটওয়ার
দেবাশিস সাহার কবিতা
রংপুরুষ
পোষা জমি ও চেনা যম বড্ড বাচাল
তুমি কী এবং কে
জলের গান লেখো শরীরে
চাকাতে ঢেলে দাও গতি
আমি রংপুরুষ তোমার ভুলঠিকানা
গাছেদের গণবিবাহ
নদী রঙের সানাই
গাছেদের সোহাগরাত
জোনাকির চোখে উৎসবের চকচক
মাছরাঙাদের গ্রামে মা হচ্ছে মাছ
অমিতাভ মৈত্রর কবিতা
পবিত্রতা ও একজন মেজর
সেঁকা রুটি দিয়ে গোঁফ মুছতে মুছতে মেজর বললেন
লম্বা মেয়েরা আমার বোন, আর শুক্রবার আমি প্রার্থনা করবো তাদের জন্য
সামনের টেবিলে পেস্ট্রি আর কফি তখন পবিত্র
হয়ে উঠছে
দুটো মোমবাতি অস্থিরভাবে জ্বলছে আর পবিত্র
হয়ে উঠছে
দেখতে দেখতে হাসছিলেন মেজর আর বলছিলেন
সূর্যাস্তের পর আমি মহাপুরুষদের মতো কথা বলি
না
কিন্তু লম্বা মেয়েরা আমার বোন আর শুক্রবার
আমি প্রার্থনা করবো তাদের জন্য
ইভা ব্রাউনের ডায়েরি থেকে
যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ফ্যুয়েরার একেবারে
বুড়ো আর মনমরা হয়ে যায়
এমনকি চুরু্টের ধোঁয়াও আর সহ্য করতে পারতো
না।
তার মানে এই নয় যে
যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার আগে সে বাড়ি ফিরতো গলা
ফাটিয়ে গান গাইতে গাইতে
আর তার ঠোঁটে জ্বলজ্বল করতো চুরুট।
তার মানে কিন্তু এ-ও নয় যে
যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ফ্যুয়েরার একেবারে
বুড়ো আর মনমরা হয়ে যায়
এমনকি চুরু্টের ধোঁয়াও আর সহ্য করতে পারতো
না।
শ্যামলকান্তি দাশের কবিতা
বিলম্ব
আমাকে হয়তো কিছুদূর নিয়ে গেলে
আমাকে হয়তো কিছুদূর নিয়ে যাবে
ওভাবে পালাতে পারবো না আমি আর –
আমাকে কোথাও পুঁতে রেখে যেও তুমি।
গ্রামের দুপাশে উদাত্ত বাঁশবন –
কোনো উৎপাত ধারেপাশে ঘেঁষবে না।
চোখ ফুঁড়ে ফুঁড়ে যেদিন উঠবে গাছ
বুক খামচিয়ে যেদিন গজাবে পাতা
মাথা গুঁড়ো গুঁড়ো যেদিন উড়বে ছাই
দেখো তো আমার উদ্ভাস কতখানি !
আমিও ছিলাম তোমাদের ভাঙা দলে
আমিও ছিলাম সুগভীর কঙ্কাল
মুখ দেখতাম কালিপড়া লন্ঠনে –
জানাতে একটু বিলম্ব হয়ে গেল !
পড়ো
তোমাকে কেউ টানছে, আর
বলছে কাছে এসো –
তুমি বা আর ক’বার ঘরে যাবে !
পিছন ফিরে তাকাচ্ছ
মুখে বনের হাসি
তারার মতো হঠাৎ একটা মুন্ডু খসে গেল !
মন করেছ যাবে না, আর
যাবেই বা আজ কেন !
চতুর্দিকে খরস্রোতা নদী।
অনেকগুলো খাতার পাতা
রক্ত দিয়ে লেখা –
পড়ো এখন, সেসব
খুলে পড়ো।
ছন্দম মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
ডানা
পৃথিবীর নতুন ডানা গজিয়েছে,
কাচুলি সামলে সে রূপনারায়ণের
দিকে দৌড়য়। নদীতে এক বিষন্ন মাঝি,
রুক্ষ চুলের, তোমার আত্মা কাঁপছে
দেবারতি, কারণ
গান নেই, ঘরে
ফিরতে গেলে একটা গানের প্রয়োজন
দেবাঞ্জন দাসের কবিতা
অপেরা
১.
কথা
বলছি আর টুকিটাকি
রোদ
এসে পড়ছে পাখিতে
ভাষাকে
এখন তিনসত্যি মনে হয়
অনির্বাণ
বল করছে
অনির্বাণ
পেপার পড়ছে
অনির্বাণ
বমি করছে
এভাবে
নদীর কাছে
অপেরা
খুঁজছি যুতসই
ছাপোষা
হব ...
মাঠে
মাঠে সূর্যাস্ত
পোষা
প্রমিস আলো হয়ে ফিরছে
আম-জাম-কাঁঠাল
আসবাব
হয়ে আছে না-পড়া চিঠিরা
অপেরা
২.
সম্পর্কের
জন্য গলে যাওয়া
মোমবাতির দুনিয়া
আলো
খই , বিন্নি ধানের চাল ...
সমুজ্জ্বল
বললে নীল মনে পড়ে
হেঁটে
যায় সমুদ্রের দিকে
ছেলে
হলে অ
মেয়ে
হলে আ
এই
ধানক্ষেত দীর্ঘ হবে
টু
মেগাপিক্সেল কুয়াশা
বাগান
থেকে বর্ণরা বেরিয়ে
খেলনা
রোদ্দুর কিনবে
আজ
তবে দুব্বো-ঘাস
বৃষ্টি
হয়ে ঝরে পড়া ...
অমিতাভ প্রহরাজের কবিতা
বলা যাক
তুমি তো স্বভাবতঃই
অবিশ্বাস্য
আর চূড়ান্ত বিশ্বাস্য আমি
তবে কেন মুখ লাগে মরণের
মূলে
দুখিমাধুরিনী ওই বোতলে চলিও
পায়ের রুস্তম ঝিংকু
হলোনাতো
আদরে মাদুর রাগানো হলোনাতো
আর
বিবিধে মোহিত ফিন্কি
তোকে আর তুই দেবোনা
বলবো বাব্ল
সাবানে ভুরু দেখি
ফর্সা ফুটো দেখি
এক আকুতি কোতলের বন্ধন
এ গুটনো মনে কি আর নটেগাছ গুঁজি?
নেক্সট দিয়ে বানানো কবিতা
মিথ্যে কথা। তারও শুরু শেষের পর্যন্তে। কপালে বিগলিত। কে আবার কপাল?
ওর বোধ নেই। ওর ভাগ্যে বোধ জোটেনি। বেচারা প্রচুর।
সত্যি কথা বলি। আমারও একটু
প্রচুর হচ্ছে। তুমি নাকি হুইলচেয়ারে করে কাকে নিয়ে আমার সাথে বেড়াতে যাবে টুক করে? শালা য্যানো টুকের কোন টুকস লাগেনা?
সামনে দেখছি খুবই উঁচুতে, তবুও খুব বড়ো একটা টাটা...
কুটিপাটি পায়ের দেখাশোনা।
ফুড়ুৎ-এ লিপ্ত। আমি কি সন্তোষজনক হয়ে লুটিয়ে পড়বো?
ওই যে দু ফোঁটা গোড়ালিতে...
কারন আমি তো চাই উনি
পট্টবর্ধন হয়ে উঠুন, ওনার বুকে যেন সদ্যোজাত মসজিদ গজায়। সংক্রান্ত
তো বলিনি ওনাকে। এই সূত্রে অঙ্গগন্ধে ভেসে যাক টো-টো করে ঘুরছে যে পৃথিবী। এই সূত্রে উনি একটি পুজো হয়ে শেষ হয়ে যান।
আর আমার চামড়ায় দ্রবীভূত
যে কাক। ছাড়াও। উশুল এক বিভ্রম। বেশী বলা
হোক, দেখি। কি আপত্তি তাতে? পাখিকে ছাড়িয়ে দাও ফাঁকার সংস্থা থেকে। পরে
চর্বি মেটে রোঁয়া চুল বাদ দিতে হবে খুব সাবধানে। আর বাকীটুকু শাহী। শাহী আর্তনাদের
কিমা।
আমার আর অবিলম্ব ঘটেনা
কখনো। মিথ্যে তো কথার কথা।
নীলাদ্রি বাগচীর কবিতা
ভালবাসা
কেউ আছে কোনওখানে। বাক্যজাল তারই অপেক্ষায়
হাঁটার বাইরে দেখছে আশ্বিনের রোদ। পড়ছে। দূরাগত। হারা ও কুর্নিশে একমাত্র
সাযুজ্য। আর আদরেও। আর ঘোরে আঁশে বিতানের সামান্যে কিন্তু কুয়ার লাগোয়া ঝোপেঝাড়ে
মেলা আছে ছেলেমানুষি। দেখছে ছায়াতরুও। কবেকার কোমরপাটায় দামোদরে এই যে খেলার
জ্যামিতি তার অংশে যেন সে-ই লিখতে চাইছে বৃহতের বারিমণ্ডল। বসতবাটির আলে পা বাড়িয়ে
ধরতে চাইছে মৌনব্রতী সে রহস্য। জীবন্ত বাক্যের খামখেয়ালি এইখানে তার মন বাঁধছে।
হয়তো অপেক্ষায় আছে কবে উঠবে শালিধান। প্রমায় সে স্বর্ণরেণু নিয়ে যাবে মধ্যরাতে।
যখন স্থাপত্যে জাগবে পয়োধর। ব্রীড়া লাস্য একাকারে নোয়া ও কঙ্কণ সারা দেবে খাঁড়িতে
খাঁড়িতে। নুয়ে যাবে ত্রিফলা সদর। প্রবাহই সংসার, স্থাবরজঙ্গমে তার ধ্বনি খুঁজছে
সমসূত্র। বাক্যের বর্ণচোরা এই যে অমোঘ তার ফুলদানি সাজিয়ে যাচ্ছে রোদ। পুষ্পরসে
ধুয়ে দিচ্ছে বাঁধানো উঠোন। বেলা যাচ্ছে দূরাগতে। কেউ আছে।
এইখান থেকে ফের শুরু হোক গ্রামজ শহর।
বিশ্বাসী ইঁদুর জানে স্বাভাবিক শস্যসন্ধান।
বেলার মাঠের শেষে প্রকৃতির দীর্ঘ বেড়ে ওঠা। সেরেস্তাদারের বউ- ঝি যখন হাত গোছায়
কাজের কৌশলে। সমাপিকা মোহে জবরদখল জমি নথিবদ্ধ হয়। কিন্তু আর হ্যাঁ ও
না’র মধ্যে হাড়িকাঠে পড়ে থাকে অনেক সময়। মোহাচ্ছন্ন, জাগরূক। তার ভয়ে তার উল্লাসে
জীবন্ত হয়ে ওঠা খামখেয়ালি। বাক্যের অধিক কোনও সুদীর্ঘ আঁকড়ানো এইখানে চিরস্থির
আছে। ব্যস্তবাগীশ হাওয়া তার নিপুণ চুলে ব্রতকথা দেয়। লক্ষ্মীশ্রী মিশিয়ে আলপনা দেয়
ঘুলঘুলির সামান্য ফাঁকায়। আরও ঘন করে চাদর জড়িয়ে দেয় কি শীত কি শীতের মরশুম।
শয্যাগত সকালেও সেই এক প্রতিষেধ কাজ করে যায়। সারাদিন পথ্যাপথ্যে, সারাদিন প্রতি-ব্যস্ততায়
অফুরান ভাঙতে থাকে। মটর শাকের জমি রৌদ্রপোড়া স্থির গন্ধে ভাসে। কেউ আছে রোগশান্তি।
কেউ আছে লক্ষ্যভেদ।
শহরে সব্বাই জানে কেউ আছে আরও বেশী কনকসূত্রের
জালে, বাক্যাকাশে, স্মৃতিচিহ্নে, ব্যক্তিগত লেখনীর শেষঅবধি ব্যর্থতায় গড়ে... মান্দারনে...
অমর নাথ ভট্টাচার্য্য-র কবিতা
খেয়ালি
ছড়িয়ে পড়ছে বিদায়ী পথিকনামা
নির্বোধের মতো এ কোণ থেকে ও কোণ
ভিজতে গিয়ে থই থই যত
আভিধানিক মজ্জার সূত্র
গ্রাম থেকে শহর
নিরাপত্তাহীন শীতকালীন উৎসব
মেজাজের তার ছিঁড়ে গেছে
গীটারে এখন রাতকানাদের
বোবা রিংটোন
অংশুমান দে-র কবিতা
অজস্র মায়ার ঋণাত্মক পরিপূরক
একত্রে একার হচ্ছি মায়া-রিবনে।
এ খুন ধর্ষন সহজ কথার ফাঁকে
রিবনে মায়া বাদাম,
ঘাপটি দেওয়া ছায়ার লুপহোলে
লেবুদের চিনচিনে ঘ্রান, ভোট ডাল ভাত অগ্রাধিকার
বিরল হুইস্কির প্রেশার, নীল থেকে অশ্লীল দূরে থাকা, বাজারী
চৌকাঠ হৃদয় আর মৃত বাতাসার জঞ্জাল।
যৌনতার কোল কয়লা বারুদের
দেওয়ালের ঘিলু শ্যাওলা শ্যাওলা প্রেম
আবেশ। ভাবছি ঘুমের বাইরে
গরম
ডিপ-ফ্রিজে গর্ত রেখে উঠে যায় সাপ;
প্রচন্ড সব ব্যাকটেরিয়া এসটিডি
মেরুদন্ডে সিজলার বুলেট চুলকায়...
নিয়ে
উড়ে যাবো কৃমিপন্থা নিয়ে,
===================
বাঁকা প্রদীপ নিয়ে দরজার
থরো
এই স্পেসে শুধু এটাই ॥॥
মার্জিন বরাবর। আগুনের
ওর্কেস্ট্রায়
লেখা আছে। অন্য কিছু ॥॥
উর্দূ টাওয়ারের হ্যালুসিনেশন, লিভারে
দেখলে তবে তুমি আমার ॥॥
কবিতা হজম তো হচ্ছে হবে, হচ্ছে হবে
চোখ চুরি করেছো অনায়াসে। ॥॥
কিছু তো বলো তবে। নীরবে
নীরবে...
================================================
ময়ূর খেওনা ॥॥
বৃষ্টি হবে না ॥॥
-----------------------------------------------------------------------
গ্যালাক্সির মত ॥॥ খুচরো জীবন নিয়ে জাল বোনা হোক
॥ একটু ম্যাসাজ হোক
ইউএসবি টা ॥॥ প্যান্ট্রি-কার ঠেলে দিক মৃত্যুদন্ডেরা।
॥ দম্ভের
মাথায় গুঁজে ॥॥ নাহলে
তো অনুভূতিহীন হয়ে যায়,
॥ মিথ্যার
ব্যাখ্যার গন্ধ ॥॥ খুবই বেকায়দা, শারীরিক, মঘরুর
॥ ঐশ্বর্য্যের
চালিয়ে দাও ॥॥ স্বল্পমন্দন, স্পার্কহীন হয়ে যায় না! ॥ পিপাসার
=====================================॥ বিপাশার
----------------------------------------------------------------------------॥ শতদ্রুর
এরপর রিবনে শুকিয়ে যাবে ফুসফুস
॥ ম্যাসাকার
যাত্রা আর হলোনা হন্য ছবির দিকে
॥ জাতীয়
চুড়ান্ত কবির দিকে, কাজল ফিকে
॥ পচা রোদ
কিশোরীর আঙুলের কিনারায় ঝুলন্ত
॥ এর দিকে
আওয়ারাগর্দির শেষ বন্দিশ মজলিসে।
॥ যেতে যেতে
----------------------------------------------------------------॥ স্মাইল দিয়ে
============== এমন কতো জায়গা না ছুঁয়েই প্রান্তে যাওয়া
॥ আমাকে
============= কি যায়! একত্র হই তবে মায়া-রিবনে। ॥ এড়িয়ে যাও সহজে
============ রিবনে হরিণ থাক, থাক র-স্টক
॥ এই পথে, বেশ্যাদের
=========== ভিনেগার নায়িকা থাক রেডহেড ॥ কোনো বাজার নেই
=========== ভিনেগার নায়িকা থাক রেডহেড ॥ কোনো বাজার নেই
========== বৃষ্টি থাক চোখের ডায়াগোনাল
॥ ডিলডোর মত চূড়ান্ত
========= ক্লিটে থাক বৌর্নভিলার অন্ধকার
॥
প্রশ্রয় আছে।
হাতুড়ি বা
======== এক পেয়ালা ধোঁয়া নৃত্য রেখে
॥ চপার নেই
======= উড়ুক রিবন উড়ুক অতিরঞ্জিত মহাকাশে...
॥ লাল চোখ নেই।
উল্কার কবিতা
কুন কে
আহত ঘাটে ভেসে আসছে
পালতোলা নদী-
ধাপ কাটা পিঁপড়ে বাড়ি
গিঁট বাক্সে টেক্কা সাজিয়ে
ঠোঁটে ঠোঁট,
কুটুম কাটুম...
ঈর্ষা বাটার লাল মেখে
আড়ি পাতে প্রেম লণ্ঠন আর
বাহান্ন বা তাস...
ঠিক তখনই উল্টো হাত আঁকা
রিমলেস চশমায় উঠল
বেহুলার অসূয়া চোখ।
অভিজিৎ দাশগুপ্তর কবিতা
দ্রবণ
শান্তনু বাতাস ইতিউতি
চোরাটান ছিটকে পড়ছে আলো
কিছু বেশি ধরে থাকা মানে
আহত জীবন
সেও ডুব দেয়
ডুবের অতীত জানে –
হাতে হাত রত্ন জপজপ তীর্থস্থান
ক্যাম্প জীবন
এক্ষুনি বসে পড়তে হবে
খিদে নিয়ে তোমার দরবার।
বারবার সেপাই সান্ত্রী এল
উদ্বাস্তুকে ভয় নয়
ছুড়ে দেওয়া কৃতকার্য হোক
কৌশিক চক্রবর্তীর কবিতা
ওয়েটিং রুম
কোনোকোনোদিন নিজেকে তিনচারটুকরো করে
ডাকবাক্সের দিকে উড়িয়ে দিতে গিয়ে
আয়নায় আটকে যাই বারবার।
পুরোনো জানলার ছিটকিনি পাল্টানোর কথা ভাবি।
গুরত্ব লিখি ক্যাসেটের ফিতে আটকালে
তাকে তুলে এনে শুশ্রূষায়।
রাত বাড়লেও যদিও এরকম অবস্থায়
কোনোদিনই কল থেকে জলপড়ার শব্দ শুনে
মনে করতে চেষ্টা করি না কোনো ধ্বংসস্তূপের গল্প।
সত্যিকারের বেদনাপ্রবাহ হাতে নিয়ে
ছায়ার দিকে তাকিয়ে
লিখে রাখতে চেষ্টা করি না
অন্ধকারের প্রসারণের গোপন ত্রিকোণমিতি।
কেবল সংকেত জানবার প্রয়োজন থাকে।
এই নয়নঠার।
এই আসমানি আতরে
আয়নার পারাওঠা চৌকাঠের রম্যপ্রস্তাবে তাই
নিরুপায় চাঁদের গন্ধে
নুয়ে পড়ে
জাতিস্মরের বাগানে বারংবার নির্মাণ করি
যত ঘুণধরা সহবাস উপনিবেশ।
রঙিন কাগজে সেইসব কাচের নাম লিখে
তারপর
অপেক্ষা করি।
গল্প বিনিময়ের ...
প্রশান্ত গুহমজুমদারের কবিতা
শ্লোক
এই
সেই। এই। সামান্য অপরিমেয়। ইত্যাদির অতিরিক্ত কিছু। সিঁড়িগুলি তাহাকে বিভিন্ন কেবল,
এমন। স্বাভাবিক দাগগুলি ঈষৎ উজ্জ্বল। রোদ্দুরে, তাই। শ্লোক, শোলোক, লোক। ভাসিয়া
যাইতেছে।
পাখি
এই
সেই। এই। সামান্য অপরিমেয়। ইত্যাদির অতিরিক্ত কিছু। সিঁড়িগুলি তাহাকে বিভিন্ন এমন।
আসে যায়, আসে। চলনে চলনে পথ। পথে পথে চলন। রঙ লাগে। অঘ্রাণে যেমন। উড়ানে যেমন।
পাখি মনে হয়। অসরল দুটি রেখা। দাগ থাকে। অনুসরনযোগ্য। প্রত্যুদ্গমনে সাধ হয়। খুব
বরফ, তথাপি। কাল নাই, তথাপি। পাখিকে ডাকিয়া আনি। প্রকৃতই। সন্ধ্যারাতে, তারাতে
আমার বিশ্বাস নাই।
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা
ওয়েটিং রুম
নিরাসক্ত
যৌনতার দিকে তাকিয়ে লোকটা
ওয়েটিং
রুম
কোন
উত্তপ্ত শ্লোগান ছাড়াই
মোমের
গলনাঙ্ক কত
জেনে
নিয়েছে
ফোলানো রুটিকে পাহারা দিচ্ছে
তিনদিনের শিশু
ফোলানো রুটিকে পাহারা দিচ্ছে
তিনদিনের শিশু
সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
আগেকার মতো
হ্যালোজেন মিছিল আর গ্রাফিতির মধ্যে
কতকিছু ভেঙেছে আর গড়েছে শহর
মুখ থেকে মুখ পর্যন্ত ছড়ানো
অদৃশ্য ট্র্যাপিজের মায়াজালে
বোনা আছে আমাদের সেইসব রাধাচূড়া দিন
মাথার ওপর দিয়ে হেলিকপ্টার বোঝাই লোক
কলকাতা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে কে জানে কোথায়
আমাদের হাঁটাচলা, গান, বিক্ষোভ
রাতের রবিনসন স্ট্রিটে
প্যারাশুটে নেমে আসবে একদিন
একদিন স্তব্ধ দেওয়ালে আঁকা হবে আমাদের পোস্টার
সিনেমার টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা বিকেলে
লুকোনো টেলিফোনে কথা হবে আগেকার মতো
সমীর রায়চৌধুরীর কবিতা
কুম্ভ রাশি ধনু লগ্ন
হাতঘড়ি
সময় ভূতত্ত্বিয় সময় পরস্পর পড়ন্ত রোদ্দুরে
সময়াভাব
পেরোচ্ছে ব্যাস্ত রেললাইন লেটট্রেন
গাছেদের
পাতাপুরোনের জ্যামেতিক পরিসর ছায়াপুরাণের নিজস্ব আঙ্গিকে
কবিতার
বাড়তি পংক্তি অতসীচিত্রণের মেলায়
বেশি
ভাববেন না স্ট্রোক অক্ষরমাত্রিক ওয়ার্কশপে
কপালে
টিপচিহ্নে জলোচ্ছ্বাসের ইঙ্গিত তোমার
তবু
প্রত্যেক শব্দ স্বপ্নেরফেরিওয়ালা হতে গররাজি
মীন রাশি সিংহ লগ্ন
মাছ
ও সিংহের
সহ অবস্থান
এই পরিসরে
ফিক্সড ফ্রেমের বাইরে
সিংহের
ছায়া জলে...
ওসমানপুর
আর ১টি মাত্র কথা এসেছে সাম্নে … যা কুসুমের ভিতর থেকে
বিবিধ ক্ষেত্রফল ও বেশ কিছু গাণিতিক সুযোগ সুবিধা বয়ে নিয়ে
আসে
ভেবেই শরীরে এক উত্তেজনা ও অস্থির ভাব হয় … একটি সুযোগহীন
কুসুম তাহলে কীভাবে বয়ে নিয়ে বেড়ানো সম্ভব !
গৃহস্থের কুটিরে আলো জ্বলে … পূজার্চ্চনা হয়
রাতে শিশিরের চকচকে ভাব এসে পড়ে
হাওয়ায় খানিকটা কমে শিশিরের তেজ
বামুনদির অবশ্য এতে কোনো হেলদোল নেই ! সে তার
২টি প্রেম নিয়ে থাকে। রান্না করে সব সুখাদ্য। সচরাচর লোকসমাজে
মুখ খোলে না …